সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পানিপথের প্রথম যুদ্ধের তাৎপর্য আলোচনা করো।

পানিপথের প্রথম যুদ্ধের গুরুত্ব/তাৎপর্য 

পানিপথের প্রথম যুদ্ধের গুরুত্ব/তাৎপর্য


          ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে পানিপথের প্রথম যুদ্ধ ভারতের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসাবে গণ্য হয়। ১৫২৫ খ্রিস্টাব্দে বাবর সসৈন্যে কাবুল থেকে যাত্রা করে পাঞ্জাবে প্রবেশ করেন। যুদ্ধে দৌলত খাঁ পরাজিত হন। এর পর বাবর দিল্লি অভিমুখে যাত্রা শুরু করলে সুলতান ইব্রাহিম লোদি তাঁকে পানিপথের প্রান্তরে বাধা  দেন।  উভয়ের  মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। ইব্রাহিম নিহত হন এবং বাবর যুদ্ধে জয়লাভ করেন। ভারতের ইতিহাসে পানিপথের প্রথম যুদ্ধ বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ । ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দের এই যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে ভারতের আদি মধ্যযুগের অবসান ঘটে এবং আধুনিক কালের আবির্ভাবের পূর্ব সূচনা ঘটে । 

প্রথমতঃ ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে পানিপথের প্রান্তরে দিল্লির শেষ সুলতান ইব্রাহিম লোদির সঙ্গে মুঘল বংশীয় কাবুলের অধিকর্তা বাবরের যুদ্ধ হয়। এই‌ যুদ্ধের ফলে সুলতান ইব্রাহিম লোদি পরাজিত এবং নিহত হন। সুলতানের মৃত্যুর সাথে সাথে দিল্লির সুলতানি শাসনের অবসান ঘটে। প্রায় ৩২০ বছরের স্থায়ী সুলতানি শাসনের অবসান ঘটার ফলে ভারতের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক জীবনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে পানিপথের যুদ্ধে বাবর জয়লাভ করেন এবং ভারতে মুঘল সাম্রাজ্য স্থাপন করেন। আগ্রা থেকে জৌনপুর পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলে মুঘল কর্তৃত্ব স্থাপিত হয়। তাই ঐতিহাসিক আর এস. ত্রিপাঠী-এই যুদ্ধকে এক চূড়ান্ত ক্ষমতা নির্ণায়ক যুদ্ধ (A decisive war) বলে অভিহিত করেছেন। আবার সতীশচন্দ্র মন্তব্য করেছেন যে ভারতের ইতিহাসে চূড়ান্ত যুদ্ধগুলির মধ্যে পানিপথ অন্যতম। 
দ্বিতীয়তঃ ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে যুদ্ধক্ষেত্রে বাবর প্রথমবার কামান এবং গোলাবারুদের ব্যবহার করেন। কামান ও গোলাবারুদের ব্যবহারের ফলেই বাবর অত্যন্ত অল্প সংখ্যক সৈন্য নিয়ে ইব্রাহিম লোদির সেনাবাহিনীকে পরাজিত করেছিলেন। যুদ্ধে কামান ও গোলাবারুদের প্রথম ব্যবহরের জন্য ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দ ভারতের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ বছর হিসাবে উল্লেখযোগ্য। 
তৃতীয়তঃ কাবুলের অধিপতি বাবর দিল্লি ও আগ্রা অধিকার করেন। এ দেশে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে ভারতের সঙ্গে আবার মধ্য এশিয়ার যোগাযোগ স্থাপিত হয়। 

      প্রথম পানিপথের যুদ্ধ দ্বারা ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের সূচনা হয়। বাবর মারা যাওয়ার আগে মুঘল সাম্রাজ্যকে শক্ত ভিতের উপর স্থাপন করে যেতে পারেননি। বাবরের পুত্র হুমায়ুন ভারতে আফগান শক্তির বিরুদ্ধে বিফল হন। হুমায়ুন পরবর্তী কালে ভারতে মুঘল সাম্রাজ্য পুনঃস্থাপন করেন। কিন্তু তখনও মুঘল- আফগান দ্বন্দ্বের অবসান হয়নি। মুঘল-আফগান প্রতিদ্বন্দ্বিতার অবসান ঘটে পানিপথের ঐতিহাসিক যুদ্ধক্ষেত্রে ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ক্রিপস মিশন কেন ভারতে এসেছিল ? ক্রিপস মিশনের প্রস্তাব‌ গুলি কী ছিল ? এক্ষেত্রে ভারতীয়দের কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল ?

সূচনা : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ভারতের ব্রিটিশ সরকার ভারতবাসীর আর্থিক ও সামরিক সাহায্য প্রার্থনা করে। যদিও কংগ্রেস এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়, ফলে এক রাজনৈতিক অচলাবস্থা দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ মন্ত্রীসভার সদস্য স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপসের নেতৃত্বে ক্রিপস মিশন ভারতে আসে (১৯৪২ খ্রি.) ও এক প্রস্তাব পেশ করে যা ক্রিপস প্রস্তাব নামে পরিচিত। ক্রিপস্ প্রস্তাব সম্পর্কে ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল বলেছিলেন—আমাদের সততা প্রমাণের জন্যই ক্রিপস মিশন অপরিহার্য ('The Cripps Mission is indispensable to prove our honesty of purpose') ! পটভূমি / কারণ    ক্রিপস্ মিশনের ভারতে আসার পটভূমি বা কারণগুলি হলো –  [1] জাপানি আক্রমণ প্রতিরোধ : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন (১৯৪১ খ্রি., ৭ ডিসেম্বর) জাপান হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের পার্লহারবারে অবস্থিত মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করে অক্ষশক্তির পক্ষে যুদ্ধে যোগদান করলে বিশ্ব রাজনীতিতে এক গুরুতর পরিবর্তন ঘটে। একে একে ফিলিপাইন, ইন্দোচিন, ইন্দোনেশিয়া, মালয় ও ব্রহ্মদেশ বিধ্বস্ত করে (১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৮ মার্চ) জাপান ভারতের নিকটে এসে হাজ...

মার্কেন্টাইল বাদ কি ? এর বৈশিষ্ট্য গুলি কি কি ?

মার্কেন্টাইলবাদ মার্কেন্টাইল বিখ্যাত ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ অ্যাডম স্মিথ তার লেখা বিখ্যাত গ্রন্থ “ওয়েল্থ্ অব নেশনস' (Wealth of Nations)- এ ‘মার্কেন্টাইলবাদ' (Mercantilism) কথাটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন। মার্কেন্টাইলবাদীদের ধারণায় পৃথিবীতে সম্পদের পরিমাণ সীমিত। এই মতবাদের মূল কথা হল সংরক্ষণবাদী অর্থনীতি অনুযায়ী বলা হয় এই মতবাদ মেনে বিদেশি পণ্য আমদানি কমানোর জন্য আমদানি শুল্ক বাড়ানো হত। এই মতবাদের মূল লক্ষ্য হল দেশ স্বনির্ভর ও সমৃদ্ধশালী করে তোলার জন্য নিজ দেশের সোনা রুপোর মতো মূল্যবান ধাতুর সঞ্চয় বাড়ানো। মূল বক্তব্যসমূহ বা বৈশিষ্ট্যসমূহ আর্থিক জাতীয়তাবাদ: ষোলো থেকে আঠারো শতকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি রাষ্ট্রের অধীনে আসে। অর্থাৎ রাষ্ট্র অর্থনীতির মূল নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠে। বণিকদের স্বার্থে গড়ে ওঠা গিল্ডগুলির বদলে রাষ্ট্র বণিক ও বাণিজ্য বিষয়গুলির দেখাশোনা শুরু করে। রাষ্ট্রের স্বার্থের সঙ্গে বণিক ও উৎপাদকের স্বার্থকে এক দৃষ্টিতে দেখা শুরু হয়। ফলে জাতীয়তাবাদী স্বার্থরক্ষার উদ্দেশ্যে অর্থনীতি পরিচালিত হতে শুধু করে, যার নাম হয় অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদ। মূল্যবান ধাতুর ওপর গু...

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে ভারতের ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

সূচনা: ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে দেওয়ানি লাভের পর বাংলার গভর্নর লর্ড ক্লাইভ পূর্বতন মুঘল আমলের ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা বজায় রাখেন। পরবর্তীকালে ওয়ারেন হেস্টিংস বাংলার গভর্নর-জেনারেল নিযুক্ত হয়ে ভারতের ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে, রাজস্ব আদায়ের ভার কোম্পানির হাতে তুলে দেন। কোম্পানির আমলে ভারতের বিভিন্ন ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা [1] পাঁচসালা বন্দোবস্ত : গভর্নর-জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস রাজস্ব আদায়ের জন্য ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে একটি ‘ভ্রাম্যমাণ কমিটি' গঠন করেন। যে ইজারাদার কোম্পানিকে সর্বোচ্চ পরিমাণ রাজস্ব দিতে রাজি হত, এই ভ্রাম্যমাণ কমিটি তাকে পাঁচ বছরের জন্য জমি বন্দোবস্ত প্রদান করত। পুরোনো জমিদার সর্বোচ্চ পরিমাণ রাজস্ব নিতে অক্ষম হলে, তিনি জমিদারি হারাতেন। এই ব্যবস্থা 'ইজারাদারি ব্যবস্থা' বা 'পাঁচসালা বন্দোবস্ত' নামে পরিচিত। এই ব্যবস্থায় রাজস্ব-সংক্রান্ত বিষয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত পূর্বতন সুপারভাইজারদের তিনি নতুন নামকরণ করেন ‘কালেক্টর’, যারা জেলার রাজস্ব আদায়, বিচার ও শাসন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করত। ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে ভ্রাম্যমাণ কমিটি দুর্নীতিগ্রস্ত হ...