সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আইজ্যাক নিউটন কিভাবে আমাদের বিশ্বচেতনা পরিবর্তন করেন ?

আইজ্যাক নিউটন

আইজ্যাক নিউটন কিভাবে আমাদের বিশ্বচেতনা পরিবর্তন করেন ?


  পৃথিবীর মহত্তম বিজ্ঞানীদের অন্যতম স্যার আইজ্যাক নিউটন (১৬৪২-১৭২৭ খ্রিস্টাব্দ) লিঙ্কনশায়ারের উলসথর্পে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যজীবনে তিনি মেধার বিশেষ কোন পরিচয় না দিলেও ট্রিনিটি কলেজে পড়ার সময় তিনি খুব সুখ্যাতি অর্জন করেন এবং ১৬৬৫ খ্রিস্টাব্দে নিউটন ট্রিনিটি কলেজের ফেলে (Fellow) নির্বাচিত হন। ১৬৬৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তিনি বীজগণিতের দ্বিপদ উপপাদ্যটি (binomial theorem) প্রমাণ করেন এবং অন্তরকলন (differential calculus) এবং সমাকলন (integral calculus)-এর মূল পদ্ধতিগুলো আবিষ্কার করেন। ১৬৬৮ খ্রিস্টাব্দে নিউটন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতে লুকাসিয়ান প্রফেসর (Lucacian Professor of Mathematics) নিযুক্ত হন। এই সময় তিনি একটি প্রতিফলক দূরবীন (reflecting telescope) তৈরি করেন যাতে লেন্সের জায়গায় একটি প্রতিফলক ব্যবহার করেন। এই আবিষ্কারের জন্য তিনি লন্ডনের রয়াল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন। রয়াল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হওয়ার পরই তিনি তাঁর আলোর প্রকৃতি সম্পর্কে আবিষ্কারটির কথা সকলকে জানান। তিনি প্রমাণ করেন যে সদা সবরকম রঙেরী আলোর সংমিশ্রণ। নিউটনের এই আবিষ্কারের সম্পর্কে পণ্ডিত মহলেও বাদানুবাদ দেখা দেয় তবে শেষ পর্যন্ত নিউটনের মতবাদ সত্য বলে প্রমাণিত হয়। আলো নিয়ে আরও পরীক্ষা নিরীক্ষা করে এক রঙা প্রতিফলিত আলোর উজ্জ্বল ও কালো বৃত্তাকার বলয় (rings) আবিষ্কার করেন। নিউটনের নামানুসারে এগুলোকে নিউটনের বলয় বলা হয়ে থাকে (Newton rings)।

     উলসথর্পে বসবাসকালেই নিউটন তাঁর মহাকর্ষ তত্ত্ব আবিষ্কার করেন। তিনি উপলব্ধি করেন যে, বিশ্বব্যাপী মহাকর্ষের ফলে যেমন সূর্যকে কেন্দ্র করে গ্রহগুলো ঘুরছে, তেমনি পৃথিবীকে কেন্দ্র করে চাঁদ ঘুরছে, আবার নিকটবর্তী সববস্তুই পৃথিবীর বুকে এসে পড়ছে। সূর্য ও গ্রহগুলোর মধ্যে প্রত্যেকটি গ্রহ ও তাদের উপগ্রহগুলোর মধ্যে, পৃথিবীর সমুদ্র ও চন্দ্র সূর্যের মধ্যে (জোয়ারভাটা) ও সাধারণভাবে জগতের যে কোন দুটি বস্তুর মধ্যে যে একই মহাকর্ষ কার্যকরী তা তাঁর কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়। এই সময় তিনি আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আবিষ্কার করেন। তিনি আবিষ্কার করেন যে একটি সমরূপ (Uniform) গোলাকার বস্তুর ভিতরের প্রতিটি কণা যদি বাইরের একটি কণাকে মহাকর্ষীয় বলের সূত্রানুসারে আকর্ষণ করে, তাহলে বাইরের কণাটির উপর যে বল কাজ করবে সেটি এমন হবে যে গোলাকার বস্তুটির সমস্ত ভর তার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত রয়েছে। কিন্তু এইসব আবিষ্কারের কথা তিনি দীর্ঘকাল পর্যন্ত গোপন রাখেন। অবশেষে ১৬৮৭ খ্রিস্টাব্দে নিউটন এইসব গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার তাঁর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘প্রিন্সিপিয়া’ অর্থাৎ ‘Philosophiae Naturalis Principia Mathermatica’তে প্রকাশ করেন। এই গ্রন্থ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক বিজ্ঞানের গোড়াপত্তন ঘটে। গণিত শাস্ত্র ছাড়াও অ্যালকেমি (alchemy), ধর্ম, রাজনীতি প্রভৃতি সকল বিষয়েই নিউটনের আগ্রহ ছিল। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে তাঁর মহাকর্ষ তত্ত্ব (Law of Gravitation) পুরাতন পৃথিবীকে নতুন করে চিনতে প্রত্যেক মানুষকে সাহায্য করে।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ক্রিপস মিশন কেন ভারতে এসেছিল ? ক্রিপস মিশনের প্রস্তাব‌ গুলি কী ছিল ? এক্ষেত্রে ভারতীয়দের কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল ?

সূচনা : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ভারতের ব্রিটিশ সরকার ভারতবাসীর আর্থিক ও সামরিক সাহায্য প্রার্থনা করে। যদিও কংগ্রেস এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়, ফলে এক রাজনৈতিক অচলাবস্থা দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ মন্ত্রীসভার সদস্য স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপসের নেতৃত্বে ক্রিপস মিশন ভারতে আসে (১৯৪২ খ্রি.) ও এক প্রস্তাব পেশ করে যা ক্রিপস প্রস্তাব নামে পরিচিত। ক্রিপস্ প্রস্তাব সম্পর্কে ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল বলেছিলেন—আমাদের সততা প্রমাণের জন্যই ক্রিপস মিশন অপরিহার্য ('The Cripps Mission is indispensable to prove our honesty of purpose') ! পটভূমি / কারণ    ক্রিপস্ মিশনের ভারতে আসার পটভূমি বা কারণগুলি হলো –  [1] জাপানি আক্রমণ প্রতিরোধ : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন (১৯৪১ খ্রি., ৭ ডিসেম্বর) জাপান হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের পার্লহারবারে অবস্থিত মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করে অক্ষশক্তির পক্ষে যুদ্ধে যোগদান করলে বিশ্ব রাজনীতিতে এক গুরুতর পরিবর্তন ঘটে। একে একে ফিলিপাইন, ইন্দোচিন, ইন্দোনেশিয়া, মালয় ও ব্রহ্মদেশ বিধ্বস্ত করে (১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৮ মার্চ) জাপান ভারতের নিকটে এসে হাজ...

মার্কেন্টাইল বাদ কি ? এর বৈশিষ্ট্য গুলি কি কি ?

মার্কেন্টাইলবাদ মার্কেন্টাইল বিখ্যাত ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ অ্যাডম স্মিথ তার লেখা বিখ্যাত গ্রন্থ “ওয়েল্থ্ অব নেশনস' (Wealth of Nations)- এ ‘মার্কেন্টাইলবাদ' (Mercantilism) কথাটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন। মার্কেন্টাইলবাদীদের ধারণায় পৃথিবীতে সম্পদের পরিমাণ সীমিত। এই মতবাদের মূল কথা হল সংরক্ষণবাদী অর্থনীতি অনুযায়ী বলা হয় এই মতবাদ মেনে বিদেশি পণ্য আমদানি কমানোর জন্য আমদানি শুল্ক বাড়ানো হত। এই মতবাদের মূল লক্ষ্য হল দেশ স্বনির্ভর ও সমৃদ্ধশালী করে তোলার জন্য নিজ দেশের সোনা রুপোর মতো মূল্যবান ধাতুর সঞ্চয় বাড়ানো। মূল বক্তব্যসমূহ বা বৈশিষ্ট্যসমূহ আর্থিক জাতীয়তাবাদ: ষোলো থেকে আঠারো শতকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি রাষ্ট্রের অধীনে আসে। অর্থাৎ রাষ্ট্র অর্থনীতির মূল নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠে। বণিকদের স্বার্থে গড়ে ওঠা গিল্ডগুলির বদলে রাষ্ট্র বণিক ও বাণিজ্য বিষয়গুলির দেখাশোনা শুরু করে। রাষ্ট্রের স্বার্থের সঙ্গে বণিক ও উৎপাদকের স্বার্থকে এক দৃষ্টিতে দেখা শুরু হয়। ফলে জাতীয়তাবাদী স্বার্থরক্ষার উদ্দেশ্যে অর্থনীতি পরিচালিত হতে শুধু করে, যার নাম হয় অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদ। মূল্যবান ধাতুর ওপর গু...

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে ভারতের ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

সূচনা: ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে দেওয়ানি লাভের পর বাংলার গভর্নর লর্ড ক্লাইভ পূর্বতন মুঘল আমলের ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা বজায় রাখেন। পরবর্তীকালে ওয়ারেন হেস্টিংস বাংলার গভর্নর-জেনারেল নিযুক্ত হয়ে ভারতের ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে, রাজস্ব আদায়ের ভার কোম্পানির হাতে তুলে দেন। কোম্পানির আমলে ভারতের বিভিন্ন ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা [1] পাঁচসালা বন্দোবস্ত : গভর্নর-জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস রাজস্ব আদায়ের জন্য ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে একটি ‘ভ্রাম্যমাণ কমিটি' গঠন করেন। যে ইজারাদার কোম্পানিকে সর্বোচ্চ পরিমাণ রাজস্ব দিতে রাজি হত, এই ভ্রাম্যমাণ কমিটি তাকে পাঁচ বছরের জন্য জমি বন্দোবস্ত প্রদান করত। পুরোনো জমিদার সর্বোচ্চ পরিমাণ রাজস্ব নিতে অক্ষম হলে, তিনি জমিদারি হারাতেন। এই ব্যবস্থা 'ইজারাদারি ব্যবস্থা' বা 'পাঁচসালা বন্দোবস্ত' নামে পরিচিত। এই ব্যবস্থায় রাজস্ব-সংক্রান্ত বিষয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত পূর্বতন সুপারভাইজারদের তিনি নতুন নামকরণ করেন ‘কালেক্টর’, যারা জেলার রাজস্ব আদায়, বিচার ও শাসন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করত। ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে ভ্রাম্যমাণ কমিটি দুর্নীতিগ্রস্ত হ...