সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ঠান্ডা লড়াই (Cold War) বলতে কী বোঝো ? ঠান্ডা লড়াই এর কারণ বা পটভূমি আলোচনা করো।

ঠাণ্ডা লড়াই

পরিচিতি : ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়। এরপর বিজয়ী মিত্রশক্তিবর্গ দুটি পরস্পরবিরোধী রাষ্ট্রগোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে বিশ্বে এক অভিনব রাজনৈতিক বাতাবরণ সৃষ্টি করে। এই দুই শিবিরের একদিকে থাকে সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট, অপরদিকে থাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমি ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট। বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক ও সামরিক আধিপত্য গড়ে তোলার জন্য এই দুই রাষ্ট্রজোটের মধ্যে যে গোপন লড়াই শুরু হয় তা ঠান্ডা লড়াই নামে পরিচিত। রুশ বিদেশমন্ত্রী ম্যাক্সিম লিটডিনভ-এর মতে—আদর্শগত ধ্যানধারণাই ঠান্ডা যুদ্ধের উদ্ভবের জন্য দায়ী। অধ্যাপক এফ. এইচ. হার্টম্যান-এর মতে—দুই মহাশক্তির দৃষ্টিভঙ্গি ও তত্ত্বগত পার্থক্য ঠান্ডা লড়াই-এর উদ্ভব ঘটায়।

ঠান্ডা লড়াইয়ের কারণ / পটভূমি

ঠান্ডা লড়াইয়ের এই উদ্ভবের ব্যাখ্যাগুলিকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। এগুলি হল- [1] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পূর্ববর্তী;[2] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন এবং [3] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী পর্যায়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পূর্ববর্তী পর্যায়: রুশ বিপ্লবের সময় থেকেই বলশেভিকরা আদর্শগত কারণে পশ্চিমি ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রগোষ্ঠির চক্ষুশূল ছিল। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের বলশেভিক বিপ্লবকে দমন করার জন্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগোষ্ঠী (আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স) জারতন্ত্রের সমর্থনে রাশিয়ায় সেনা পাঠায়। সমাজতন্ত্রকে সূচনাকালেই শেষ করে দেওয়া ছিল তাদের উদ্দেশ্য। কাজেই রাশিয়ায় সমাজতন্ত্রের জন্মলগ্ন থেকেই বিশ্বে 'দ্বিমেরুকরণ রাজনীতির' জন্ম হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন পর্যায় :

  1. দ্বিতীয় রণাঙ্গনের ভূমিকা : যুদ্ধ চলাকালে জার্মানির প্রবল আক্রমণে দিশাহারা সোভিয়েত রাশিয়ার পশ্চিমি জোটের কাছে দ্বিতীয় রণাঙ্গন খোলার অনুরোধকে নিয়ে চার্চিলের দুমুখো নীতি স্টালিনকে ক্রুদ্ধ করে তোলে।
  2. মার্কিন সময় দপ্তর পেন্টাগনের প্রভাব : মার্কিন সামরিক দপ্তর পেন্টাগনের সেনাপতিরা কট্টর রুশ বিরোধী ছিলেন। তাঁরা কখনোই চাননি আমেরিকা রাশিয়ার বিরুদ্ধে নরম মনোভাব পোষণ করুক। তাঁরা মার্কিন রাষ্ট্রপতি ট্রুম্যানকে সোভিয়েত রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর নীতি গ্রহণ করতে উসকানি দেন। এ ছাড়াও ইয়াল্টা সম্মেলনে (১৯৪৫ খ্রি.) পোল সীমান্ত নিয়ে সোভিয়েত রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমি শক্তিগুলির মতপার্থক্য এবং গ্রিসের মুক্তিযুদ্ধে ইঙ্গ-মার্কিন হস্তক্ষেপ স্টালিনকে রুষ্ট করে তোলে।
  3. ট্রুম্যানের দায়িত্ব : আমেরিকার নতুন রাষ্ট্রপতি ট্রুম্যান ছিলেন প্রবলভাবে সোভিয়েত-বিরোধী। পোল্যান্ড থেকে জার্মান সৈন্য সরে গেলে সেখানে রুশ প্রভাবিত সরকার গঠিত হয়। এতে ক্রুদ্ধ ট্রুম্যান রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মলোটডের কাছে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
  4. পটসডম সম্মেলন: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন শেষ শীর্ষ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয় পটসডামে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে। পটসডাম সম্মেলনে জার্মানির সমস্ত সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হয়নি। জার্মানির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ নিয়ে সোভিয়েত ও মার্কিন মতবিরোধ প্রকট হয়ে ওঠে। পারস্পরিক চাপানউতোরের মধ্যে দিয়ে এই সম্মেলন শেষপর্যন্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। বলা হয় পটসডাম সম্মেলন থেকেই ঠান্ডা লড়াই প্রকাশ্যে আসে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী পর্যায় :

  1. পাঁচ বিদেশমন্ত্রীর সম্মেলন : অক্ষশক্তিভুক্ত দেশগুলির সঙ্গে শান্তি চুক্তির খসড়া রচনার লক্ষ্যে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও চিন এই পাঁচটি দেশের বিদেশমন্ত্রীরা এক কাউন্সিল গঠন করেন। কিন্তু এই কাউন্সিলের কার্যকলাপে সোভিয়েত রাশিয়ার সন্দেহ হয় যে, পশ্চিমি শক্তি পূর্ব ইউরোপে দ্রুত হাজির হওয়ার উদ্দেশ্যে জার্মানির সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।
  2. চার্চিলের ফালটন বক্তৃতা : ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল আমেরিকার মিসৌরি প্রদেশের অন্তর্গত ফালটনে ওয়েস্টমিনস্টার কলেজে এক ভাষণে (১৯৪৬ খ্রি., ৫ মার্চ) বলেন, উত্তর বালটিক সাগরের তীরবর্তী স্টেটিন থেকে দক্ষিণে অ্যাড্রিয়াটিক সাগরের ট্রিয়েস্ট পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চল লৌহ যবনিকার (সোভিয়েত) আড়ালে ঢাকা। ফালটন বক্তৃতায় চার্চিল রুশ আগ্রাসন থেকে ইউরোপীয় সভ্যতাকে রক্ষা করার দায়িত্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অর্পণ করেন। 
  3. কেন্নানের বেষ্টনী তত্ত্ব : সোভিয়েত রাশিয়ায় কর্মরত প্রাক্তন সহকারী মার্কিন রাষ্ট্রদূত জর্জ এফ. কেন্নান, মি. এক্স ছদ্মনামে আমেরিকার 'ফরেন অ্যাফেয়ার্স' নামক পত্রিকায় এক প্রবন্ধে সোভিয়েত রাশিয়ার আক্রমণাত্মক নীতি প্রতিহত করার জন্য এবং সোভিয়েত প্রভাবকে সীমাবদ্ধ রাখার জন্য 'বেষ্টনী তত্ত্ব' (১৯৪৭ খ্রি., ৪ জুলাই) প্রকাশ করেন, যা মার্কিন প্রশাসন মেনে নেয়।
  4. ট্রুম্যান নীতি : আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হ্যারি ট্রুম্যান মার্কিন কংগ্রেসে এক বক্তৃতায় (১৯৪৭ খ্রি., ১২ মার্চ) তুরস্ক ও গ্রিস সহ বিশ্বের যে-কোনো দেশকে সোভিয়েত অগ্রাসনের বিরুদ্ধে সামরিক ও আর্থিক সাহায্য দানের প্রতিশ্রুতি দেন যা ট্রুম্যান নীতি নামে পরিচিত। ঠাণ্ডা লড়াইয়ের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় এই নীতি ঘোষণার মাধ্যমে।
  5. মার্শাল পরিকল্পনা : ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৫ জুন আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বক্তৃতায় আমেরিকার বিদেশমন্ত্রী জর্জ মার্শাল যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরোপে আর্থিক পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে এক পরিকল্পনা পেশ করেন, যা মার্শাল পরিকল্পনা নামে পরিচিত। ইউরোপে অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন পরিকল্পনা নিয়ে ট্রুম্যান নীতির পরিপূরক হিসেবে উপস্থাপিত হয় এই মার্শাল পরিকল্পনা। ফলে আরও ঘনীভূত হয়ে ওঠে ঠান্ডা লড়াই।
  6. সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে আর্থিক সহায়তা পরিষদ গঠন : সোভিয়েত রাশিয়া ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে গঠন করে কমিকন (COMECON বা Council for Mutual Economic Assistance) নামে একটি আর্থিক সহায়তা পরিষদ। মার্শাল পরিকল্পনার প্রত্যুত্তর হিসেবে কমিকন গঠিত হয়েছিল। 
  7. আমেরিকার নেতৃত্বে শক্তিজোট গঠন : সোভিয়েত আগ্রাসন প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে প্রথমে গড়ে তোলে ‘উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা’ (NATO)। তারপর একে একে গড়ে তোলে 'দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া চুক্তি সংস্থা' (SEATO); 'মধ্যপ্রাচ্য প্রতিরক্ষা সংস্থা (MEDO) [পরবর্তীকালে এটির নাম হয় 'মধ্য এশিয়া চুক্তি সংস্থা' (CENTO)]; 'অ্যানজাস' (ANZUS) ইত্যাদি শক্তিজোট।
  8. সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে শক্তিজোট গঠন: আমেরিকার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা পশ্চিমি সামরিক শক্তিজোট ন্যাটোর জবাবে সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলিকে (রাশিয়া, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, চেকোশ্লোভাকিয়া, রুমানিয়া, বুলগেরিয়া, আলবেনিয়া ও পূর্ব জার্মানি) নিয়ে গঠিত হয় ওয়ারশ চুক্তি সংস্থা (Warsaw Pact Organisation, WPO), যা ছিল একটি যৌথ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।

উপসংহার : শুধুমাত্র ইউরোপেই নয়, ঠান্ডা লড়াইয়ের পরিধি সারা বিশ্বেই সম্প্রসারিত হয়। এক ভয়ংকর যুদ্ধভীতি সমগ্র বিশ্বের মানুষকে অস্থির করে তোলে। মরগ্যানথাউ এবং লুই জে. হ্যালের মতো বাস্তববাদীরা ঠান্ডা লড়াইকে মূলত ক্ষমতার রাজনীতি আর শক্তিসাম্যের সংকট থেকে উদ্ভূত এক প্রক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করেছেন। নোয়াম চমস্কির মতে—ঠান্ডা যুদ্ধ হল এমন একটি কার্যকরী ব্যবস্থা যাতে মহাশক্তিধর দেশগুলি নিজেদের অঞ্চলগুলি নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ক্রিপস মিশন কেন ভারতে এসেছিল ? ক্রিপস মিশনের প্রস্তাব‌ গুলি কী ছিল ? এক্ষেত্রে ভারতীয়দের কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল ?

সূচনা : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ভারতের ব্রিটিশ সরকার ভারতবাসীর আর্থিক ও সামরিক সাহায্য প্রার্থনা করে। যদিও কংগ্রেস এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়, ফলে এক রাজনৈতিক অচলাবস্থা দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ মন্ত্রীসভার সদস্য স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপসের নেতৃত্বে ক্রিপস মিশন ভারতে আসে (১৯৪২ খ্রি.) ও এক প্রস্তাব পেশ করে যা ক্রিপস প্রস্তাব নামে পরিচিত। ক্রিপস্ প্রস্তাব সম্পর্কে ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল বলেছিলেন—আমাদের সততা প্রমাণের জন্যই ক্রিপস মিশন অপরিহার্য ('The Cripps Mission is indispensable to prove our honesty of purpose') ! পটভূমি / কারণ    ক্রিপস্ মিশনের ভারতে আসার পটভূমি বা কারণগুলি হলো –  [1] জাপানি আক্রমণ প্রতিরোধ : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন (১৯৪১ খ্রি., ৭ ডিসেম্বর) জাপান হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের পার্লহারবারে অবস্থিত মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করে অক্ষশক্তির পক্ষে যুদ্ধে যোগদান করলে বিশ্ব রাজনীতিতে এক গুরুতর পরিবর্তন ঘটে। একে একে ফিলিপাইন, ইন্দোচিন, ইন্দোনেশিয়া, মালয় ও ব্রহ্মদেশ বিধ্বস্ত করে (১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৮ মার্চ) জাপান ভারতের নিকটে এসে হাজ...

মার্কেন্টাইল বাদ কি ? এর বৈশিষ্ট্য গুলি কি কি ?

মার্কেন্টাইলবাদ মার্কেন্টাইল বিখ্যাত ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ অ্যাডম স্মিথ তার লেখা বিখ্যাত গ্রন্থ “ওয়েল্থ্ অব নেশনস' (Wealth of Nations)- এ ‘মার্কেন্টাইলবাদ' (Mercantilism) কথাটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন। মার্কেন্টাইলবাদীদের ধারণায় পৃথিবীতে সম্পদের পরিমাণ সীমিত। এই মতবাদের মূল কথা হল সংরক্ষণবাদী অর্থনীতি অনুযায়ী বলা হয় এই মতবাদ মেনে বিদেশি পণ্য আমদানি কমানোর জন্য আমদানি শুল্ক বাড়ানো হত। এই মতবাদের মূল লক্ষ্য হল দেশ স্বনির্ভর ও সমৃদ্ধশালী করে তোলার জন্য নিজ দেশের সোনা রুপোর মতো মূল্যবান ধাতুর সঞ্চয় বাড়ানো। মূল বক্তব্যসমূহ বা বৈশিষ্ট্যসমূহ আর্থিক জাতীয়তাবাদ: ষোলো থেকে আঠারো শতকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি রাষ্ট্রের অধীনে আসে। অর্থাৎ রাষ্ট্র অর্থনীতির মূল নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠে। বণিকদের স্বার্থে গড়ে ওঠা গিল্ডগুলির বদলে রাষ্ট্র বণিক ও বাণিজ্য বিষয়গুলির দেখাশোনা শুরু করে। রাষ্ট্রের স্বার্থের সঙ্গে বণিক ও উৎপাদকের স্বার্থকে এক দৃষ্টিতে দেখা শুরু হয়। ফলে জাতীয়তাবাদী স্বার্থরক্ষার উদ্দেশ্যে অর্থনীতি পরিচালিত হতে শুধু করে, যার নাম হয় অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদ। মূল্যবান ধাতুর ওপর গু...

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে ভারতের ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

সূচনা: ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে দেওয়ানি লাভের পর বাংলার গভর্নর লর্ড ক্লাইভ পূর্বতন মুঘল আমলের ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা বজায় রাখেন। পরবর্তীকালে ওয়ারেন হেস্টিংস বাংলার গভর্নর-জেনারেল নিযুক্ত হয়ে ভারতের ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে, রাজস্ব আদায়ের ভার কোম্পানির হাতে তুলে দেন। কোম্পানির আমলে ভারতের বিভিন্ন ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা [1] পাঁচসালা বন্দোবস্ত : গভর্নর-জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস রাজস্ব আদায়ের জন্য ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে একটি ‘ভ্রাম্যমাণ কমিটি' গঠন করেন। যে ইজারাদার কোম্পানিকে সর্বোচ্চ পরিমাণ রাজস্ব দিতে রাজি হত, এই ভ্রাম্যমাণ কমিটি তাকে পাঁচ বছরের জন্য জমি বন্দোবস্ত প্রদান করত। পুরোনো জমিদার সর্বোচ্চ পরিমাণ রাজস্ব নিতে অক্ষম হলে, তিনি জমিদারি হারাতেন। এই ব্যবস্থা 'ইজারাদারি ব্যবস্থা' বা 'পাঁচসালা বন্দোবস্ত' নামে পরিচিত। এই ব্যবস্থায় রাজস্ব-সংক্রান্ত বিষয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত পূর্বতন সুপারভাইজারদের তিনি নতুন নামকরণ করেন ‘কালেক্টর’, যারা জেলার রাজস্ব আদায়, বিচার ও শাসন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করত। ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে ভ্রাম্যমাণ কমিটি দুর্নীতিগ্রস্ত হ...